টাঙ্গাইলে যমুনার চরে ড্রেজিং নিয়ে বিভ্রান্তি

টাঙ্গাইলে যমুনার চরে ড্রেজিং নিয়ে বিভ্রান্তি

মোঃ আল-আমিন শেখ টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি:-যতদূর চোখ যায় শুধু কাঁচা আর আধা পাকা ধানিজমি। দূরে, অনেক দূরে দৃষ্টি গিয়ে থামে সবুজ গাছপালার আড়ালে বাড়িঘর, স্কুল, মাদ্রাসা আর মসজিদের টিনের চালায়। 

ধানিজমির মধ্যে চিনাবাদাম, খেসারি, মসুর, মটরশুটি আর মৌসুুমি সবজিতে ঠাঁসা। বছর ছয়েক আগে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ জেগে উঠা চর যেন যমুনার বুকে বড়সড় দ্বীপ। ফসল ফলন ও জনবসতিকে ঘিরে এখন গ্রামীণ কর্মযজ্ঞ গড়ে ওঠেছে। 

জানা যায়, গোপালপুর উপজেলার চর সোনামুইয়ের ওপাড়ে সুবর্ণখালি থেকে দক্ষিণে জগতপুরা, জোমের বয়ড়া, চর ভরুয়া, তালতলা, রাজাপুর, রামপুর, গোপিনাথপুর, জঙ্গীপুর, রুলিপাড়া, বেলটিয়াপাড়া ও ডিগ্রীর চর জেগে ওঠে ছয় বছর আগে। 

গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রওশন খান আইয়ুব জানান, ছয় বছর আগে জেগে ওঠা চর এখন শস্য ভান্ডার। গত অক্টোবরে পাউবোর টাস্কফোর্সের টিম সরেজমিন জরিপকালে যমুনার বুকে এ বিশাল চর দেখে যায়। 

তখন বলা হয়েছিল, যমুনা নদীর জামালপুর অংশের খননের সঙ্গে মিল রেখে দক্ষিণে টাঙ্গাইল অংশের বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সমান্তরালভাবে ১০ কিলোমিটার খনন করা হবে। জামালপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড এরই মধ্যে সাড়ে ছয় কিলোমিটার খনন করে টাঙ্গাইলের গোপালপুর প্রান্তে এসেছেন। 

কিন্তু টাঙ্গাইল পাউবো এখন কথা রাখছে না। তারা নদীর জামালপুর অংশ থেকে দক্ষিণে সরল রেখায় প্রবাহিত মূল ধারা ডানে রেখে বামের বিশাল চর বরাবর খননের বন্দোবস্ত করছেন। 

ভূঞাপুর উপজেলার জগত্পুরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান জানান, আমরা নদী ড্রেজিংয়ের বিরুদ্ধে নই। নদী খনন হোক নদীর মূল ধারায় সরল রৈখিকে। কিন্তু টাঙ্গাইল পাউবো সেটি না করে জামালপুর অংশের পর ডানে বক্রাকারে সরিয়ে বিশাল ফসলি চরকে টার্গেট করে ড্রেজিংয়ের আয়োজন করছে। 

ধানিজমিতে পোঁতা হয়েছে লাল নিশান। চরের বুকে ড্রেজিং হলে ৫ হাজার জমির ফসলহানি হবে। কয়েকহাজার বাড়িঘর নদীতে বিলিন হবে। বহু পরিবার বাস্তুচ্যূত হবে। মূলত বালু ব্যবসায় শত কোটি টাকার লাভকে ঘিরে প্রভাবশালী মহল কায়েমী চরকে ড্রেজিংয়ের বলি বানাচ্ছেন। 

অর্জুনা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন খান জানান, মূল ধারা দিয়ে সোজাসুজি নদী খনন করার কথা বলেছিল পাউবো। কিন্তু এখন টাঙ্গাইল অংশে ডানে কয়েক কিলোমিটার বাঁকিয়ে খনন করার আয়োজন হচ্ছে। 

এর উদ্দেশ্য শত কোটি টাকার বালু বাণিজ্য। চরের বুক চিরে খনন হলে তারাকান্দি-ভূঞাপুর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়বে। নদী বন্দর বিলীন হয়ে যাবে। জোমের বয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সোহেল জানায়, এ চরে ছয় বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে তাদের স্কুল ঘর। স্কুল থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে যমুনার মূল শাখা। 

সেখান দিয়ে নদী খনন না করে তাদের স্কুলের পাশেই লাল নিশান টানিয়ে খননের আয়োজন চলছে। চরের মাঝ বরাবর খনন হলে তাদের স্কুল যাবে। গ্রাম যাবে। তার মতো অনেক শিশুর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। অর্জুনা গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের প্রধান আব্দুস সাত্তার খান জানান, নদীর মূল ধারায় সরলে রৈখিকে ড্রেজিং না হলে বহু পরিবার বাস্তুচ্যূত হবে। অর্জুনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব মোল্লা জানান, মালিকানায় রেকর্ড করা এসব চর জমির ওপর দিয়ে ড্রেজিং করার আগে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজিং হচ্ছে নদী শাসন ও নদী খনন প্রকল্পের মাধ্যমে। গত অক্টোবরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাস্কফোর্স টিম সার্ভে করে যেভাবে এলাইনমেন্ট করেছেন সেভাবেই নদী খনন করা হবে। সেখানে তারা ফসল বা বাড়িঘর দেখেননি। আর নদীর কোনো চর রক্ষা করা বা ধ্বংস করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। নদীর গতিপথের স্বাভাবিক ধারা প্রবাহমান রাখার জন্য যেভাবে খনন প্রয়োজন সেভাবেই করা হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন